বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল...

#বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল...

কদম এর বৈজ্ঞানিক নাম Anthocephalus indicus। এটি নীপ নামেও পরিচিত। এছাড়া বৃত্তপুষ্প, মেঘাগমপ্রিয়, কর্ণপূরক, ভৃঙ্গবল্লভ, মঞ্জুকেশিনী, পুলকি, সর্ষপ, প্রাবৃষ্য, ললনাপ্রিয়, সুরভি, সিন্ধুপুষ্পও কদমের নাম।
বাংলাদেশ, ভারতের উষ্ণ অঞ্চল, চীন, মালয় কদমের আদি নিবাস।
দীর্ঘাকৃতি, বহুশাখাবিশিষ্ট বিশাল বৃক্ষ বিশেষ এবং এর ফুল। রূপসী তরুর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কদম। কদমের কাণ্ড সরল, উন্নত, ধূসর থেকে প্রায় কালো এবং বহু ফাটলে রুক্ষ, কর্কশ। শাখা অজস্র এবং ভূমির সমান্তরালে প্রসারিত। পাতা হয় বড় বড়, ডিম্বাকৃতি, উজ্জ্বল-সবুজ, তেল-চকচকে এবং বিন্যাসে বিপ্রতীপ। উপপত্রিকা অত্যন্ত স্বল্পস্থায়ী বিধায় পরিণত পাতা অনুপপত্রিক। বোঁটা খুবই ছোট। নিবিড় পত্রবিন্যাসের জন্য কদম ছায়াঘন। শীতে কদমের পাতা ঝরে এবং বসন্তে কচি পাতা গজায়।
সাধারণত পরিণত পাতা অপেক্ষা কচি অনেকটা বড়। কদমের কচি পাতার রঙ হালকা সবুজ। কদমের একটি পূর্ণ মঞ্জরিকে সাধারণত একটি ফুল বলেই মনে হয়। তাতে বলের মতো গোল, মাংসল পুষ্পাধারে অজস্র সরু সরু ফুলের বিকীর্ণ বিন্যাস। পূর্ণ প্রস্ফুটিত মঞ্জরির রঙ সাদা-হলুদে মেশানো হলেও হলুদ-সাদার আধিক্যে প্রচ্ছন্ন। প্রতিটি ফুল খুবই ছোট, বৃতি সাদা, দল হলুদ, পরাগচক্র সাদা এবং বহির্মুখীন, গর্ভদণ্ড দীর্ঘ। ফল মাংসল, টক এবং বাদুড় ও কাঠবিড়ালির প্রিয় খাদ্য। ওরাই বীজ ছড়ানোর বাহন।
গাছের বৃদ্ধি অত্যন্ত দ্রুত বলে জ্বালানিকাঠের জন্য রোপণ উত্তম। কাঠ খুবই নরম তাই দারুমুল্য নিকৃষ্ট হলেও সাদা, নরম কাঠ বাক্স-পেটরা ও অন্যান্য কাজে ব্যবহার্য। ছাল জ্বরের ঔষধ হিসেবেও উপকারী।
ষড়ঋতুর লীলার মধ্যে বৈশিষ্ট্য ও বৈচিত্র্যে বর্ষাকাল সবচেয়ে আকর্ষণীয়। বসন্তকে ঋতুরাজ বললেও রূপের গৌরব ও প্রকৃতির সৌন্দর্যের জন্য বর্ষাই প্রকৃতির রানী। বর্ষার আগমনে খালবিল জলমগ্ন হয়ে যায়। বর্ষার মাঠে এলোমেলো বাতাসে সবুজ ধানের 








শিষগুলোর দুলুনি আর পানির ঢেউয়ের ছন্দমিল দৃশ্য অভিভূত করে তোলে মন। খাল-বিলে অজস্র শাপলা ফুটে হাসতে থাকে। ছোট ছেলেমেয়েরা ডুবিয়ে ডুবিয়ে শাপলা-শালুক কুড়ায়, যেন ডুবসাঁতারে হার মানায় পানকৌড়িকেও। এ সময় পল্লীবধূরা ছই নৌকায় বাপের বাড়ি নাইয়র যায়। শাড়ির আঁচলের ফাঁকে ঘোমটা পরা রাঙামুখ ফিরে ফিরে চায় ফেলে আসা পথ পানে। পানির স্রোতের কল কল ধ্বনি আর বাতাসে পালের শব্দ। নৌকা চলতে থাকে আপন মনে। দরাজ গলায় মাঝি গেয়ে ওঠে উদাসী ভাটিয়ালী গান। কতই না আনন্দ অনুভূত হয়! রিমঝিম বৃষ্টির মিষ্টিমাখা সুরে প্রাণ ফিরে পায় প্রকৃতি। হেসে ওঠে সবুজরঙা গাছপালা।
বর্ষা মানে বাহারি রঙের সুগন্ধী ফুলের সমাহার। বর্ষা যেন আমাদের প্রকৃতিকে আপন মনে বিলিয়ে দেয় এবং এর ফুলের সৌন্দর্য আমাদের করে তোলে বিমোহিত। বর্ষার নানারকম ফুলগুলো ফুটতেও শুরু করেছে। বর্ষার যে ফুলগুলো আমাদের আকৃষ্ট করে তোলে তাহলো- শাপলা, কদম, কেয়া, কলাবতী, পদ্ম, দোলনচাঁপা, সোনাপাতি (চন্দ্রপ্রভা), ঘাসফুল, পানাফুল, কলমী ফুল, কচুফুল, ঝিঙেফুল, কুমড়াফুল, হেলেঞ্চাফুল, কেশরদাম, পানি মরিচ, পাতা শেওলা, কাঁচকলা, পাটফুল, বনতুলসী, নলখাগড়া, ফণীমনসা, উলটকম্বল, কেওড়া, গোলপাতা, শিয়ালকাটা, কেন্দার, কামিনী, রঙ্গন, অলকানন্দ, বকুল এবং এ ছাড়া নানা রঙের অর্কিড। বর্ষা ঋতু যেন ফুলের জননী।

Comments

Popular posts from this blog

বিষন্ন গাছ বা দুঃখের বৃক্ষ বা শিউলি

জারুল

মায়াবতী কাঠগোলাপ