ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন
ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন
ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন ছবিঃ তোফাজ্জল হোসেন |
ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন বাংলাদেশের পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলায় অবস্থিতি প্রায় ১শ' বছরের পুরোনো ব্রিটিশ আমলে নির্মিত রেলওয়ে জংশন ঈশ্বরদী রেল জংশন স্টেশন ও ইয়ার্ড'। এটি দেশের প্রাচীনতম এবং অন্যতম বৃহৎ রেল স্টেশন এবং জংশন।
ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন ঈশ্বরদী পৌরসভা সদরে অবস্থিত। ১৮৬২ সালে প্রথম আমাদের এই বাংলার সঙ্গে ভারতের ট্রেন চলাচল শুরু হয়। সে সময় পাকশীতে পদ্মা নদীর সাঁড়া ঘাটে ছিল রেল স্টেশন। পরে কালের বিবর্তনে নতুন রেল স্টেশন স্থাপনের প্রয়োজন দেখা দিলে ১৯১০ সালে পাকশীতে পদ্মা নদীর ওপর হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ১৯১৫ সালে এর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন স্থাপিত হয়। ২ কিলোমিটার দীর্ঘ ইয়ার্ড ও স্টেশনটিতে ১৭টি রেললাইন স্থাপন করা হয়। মূলত, তখন থেকে দেশের উত্তর-দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। দীর্ঘ প্রায় ১শ' বছরে সময়ের প্রয়োজনে অনেক কিছুরই পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু অপরিবর্তিত রয়েছে এই গুরুত্বপূর্ণ রেল স্টেশনটি।
ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন ছবিঃ তোফাজ্জল হোসেন |
বৃটিশকাল থেকেই ঈশ্বরদী একটি গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ে জংশন। এ ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনটি পাকশী হার্ডিঞ্জ সেতু নির্মিত হওয়ার পূর্বে বর্তমান ঈশ্বরদী এয়ার পোর্ট এর নিকটবর্তী স্থানে অবস্থিত ছিল। সেই সময় পদ্মানদীর পশ্চিম পাড়ে রেলওয়ে ঘাট এবং পূর্ব পাড়ে রেলওয়ে সাড়া ঘাট লাইন ছিল। এপাড় ওপাড় নদী পথে রেলওয়ে ফেরীতে যাত্রী ও মালামাল পারাপার করা হত।
পরে পাকশী হার্ডিঞ্জ সেতু চালু হওয়ার পর ঈশ্বরদী স্টেশনটি বর্তমান স্থানে অবস্থিত হয়। সেই থেকে ভেড়ামারা স্টেশন হতে সোজা পাকশী হার্ডিঞ্জ সেতু পার হয়ে ঈশ্বরদী জংশন স্টেশন হয়ে আজিমনগর ও আব্দুলপুর পর্যন্ত নতুন লাইন চালু হয়। ০১/৭/২০০৯ খ্রিঃ সাঁড়া-ঈশ্বরদী হতে ভাঙ্গুড়া স্টেশন পর্যন্ত রেললাইন চালু হয়। বর্তমানে ৪টি গুরুত্বপূর্ণ রেলপথ ঈশ্বরদীর সাথে সংযুক্ত। এগুলো হল ঈশ্বরদী-খুলনা, ঈশ্বরদী-রাজশাহী, ঈশ্বরদী-পার্বতীপুর এবং ঈশ্বরদী- ঢাকা।
পরে পাকশী হার্ডিঞ্জ সেতু চালু হওয়ার পর ঈশ্বরদী স্টেশনটি বর্তমান স্থানে অবস্থিত হয়। সেই থেকে ভেড়ামারা স্টেশন হতে সোজা পাকশী হার্ডিঞ্জ সেতু পার হয়ে ঈশ্বরদী জংশন স্টেশন হয়ে আজিমনগর ও আব্দুলপুর পর্যন্ত নতুন লাইন চালু হয়। ০১/৭/২০০৯ খ্রিঃ সাঁড়া-ঈশ্বরদী হতে ভাঙ্গুড়া স্টেশন পর্যন্ত রেললাইন চালু হয়। বর্তমানে ৪টি গুরুত্বপূর্ণ রেলপথ ঈশ্বরদীর সাথে সংযুক্ত। এগুলো হল ঈশ্বরদী-খুলনা, ঈশ্বরদী-রাজশাহী, ঈশ্বরদী-পার্বতীপুর এবং ঈশ্বরদী- ঢাকা।
ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন ছবিঃ তোফাজ্জল হোসেন |
তখন দুই কিলোমিটার ইয়ার্ড এবং ১৭ টি আলাদা আলাদা রেললাইন স্থাপিত হয়েছিলো জংশনটিতে। শুরু থেকে আজও অবধি বহু যাত্রীবাহী এবং মালবাহী রেলগাড়ীর যাত্রাপথে এক স্টেশনের পরিচিত নাম ঈশ্বরদী জংশন। যুগে যুগে এই জংশনের সব দিকেই সময়ের প্রয়োজনে এসেছে নানান পরিবর্তন। বর্তমানে এখানে প্রতিদিন ২৪ টি যাত্রীবাহী ট্রেন এবং ১২ টি মালবাহী ট্রেন যাওয়া আসা করে। এগুলোর মধ্যে ১৭ টি আন্তঃনগর, ৬ টি মেইল ট্রেন এবং ৭ টি লোকাল কমিউটার রয়েছে। এই জংশনে প্লাটফর্মের সংখ্যা ৪ টি। গোটা স্টেশন পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ১৯ টি বিভাগে রয়েছেন আড়াই সহস্রাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী। সৃষ্টির শুরু অর্থাৎ ১৯১০ সাল থেকেই স্টেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে ঈশ্বরদী এবং পাকশীর মধ্যে ‘পাইলট’ নামে একটি ট্রেন চালু করা হয়। এ জংশন এবং হার্ডিঞ্জ ব্রীজ গড়ে তোলার সময় পাকশী পদ্মানদীর পাদদেশে গড়ে ওঠে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে অফিস। এই অফিস থেকেই অতীতে সারা ভারতবর্ষের মাঝে রেল যোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ করা হতো।
ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন ছবিঃ তোফাজ্জল হোসেন |
গৌরবময় ঈশ্বরদী স্টেশনে অনেক ট্রেন আসে প্রতিদিন এবং এইসব ট্রেন এখানে এসে অন্যান্য স্টেশনের চেয়ে তুলনামূলকভাবে বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করে। কারণ এখানে এসেই ট্রেনের ইঞ্জিন বদল করা হয়। এই বিরতির সময়ে যাত্রীরা ট্রেন থেকে নেমে জংশনটি ঘুরে দেখার সুযোগ পান। তাছাড়া যাত্রীদের প্রয়োজনীয় নানান জিনিসের প্রাপ্যতা বেশ ভালো কারণ ঈশ্বরদী জংশনের প্লাটফর্মেই মিলবে নানান প্রয়োজনীয় জিনিসের বেশ কয়েকটি দোকান। আর তাছাড়া হকার এবং ভ্রাম্যমান ব্যবসায়ীরা তাদের মালপত্র নিয়ে থেমে থাকা ট্রেনের জানালার কাছে গিয়ে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকেন।
তবে বর্তমানে এই ঐতিহ্যবাহী এবং প্রচন্ড গুরুত্বপূর্ণ জংশনটি নানান জটিলতায় আক্রান্ত। বেশ কয়েক বছর ধরে এর সংস্কারের কথা থাকলেও তার বাস্তবায়ন দেখা যায়নি। এখানে প্রতিদিন ২ থেকে ৩ হাজার যাত্রী যাওয়া-আসা করেন। তাদের সুবিধার্থে নির্মিত বিশ্রামাগার, বাথরুম এবং ফুটপাথ চলে গিয়েছে হকার, চোরাচালানী এবং বখাটেদের দলে। বিদ্যুতের এবং পানির সমস্যা দেখা গেলেও তা ঠিক করার ক্ষেত্রে উদাসীন সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাগণ। বেশ কয়েকটি সূত্র এও নিশ্চিত করেছে যে সাম্প্রতীক সময়ে ঈশ্বরদী স্টেশন ইয়ার্ড দখল করে রাখছে অসাধু মাদক ব্যবসায়ী এবং চোরাচালানীরা। নিরাপত্তারক্ষীরা এগুলো জেনেও না জানার ভান করে থাকেন এবং অনেক ক্ষেত্রে এধরণের অসামাজিক কর্মকান্ডে স্বয়ং তারাই সহায়তাও করে থাকেন। বিষয়টি রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানেন। কিন্তু তাদের অধীনস্ত নানান বিভাগের মাঝে সমন্বয়ের অভাবে এগুলোর সমাধান করা সম্ভব হচ্ছেনা।
ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন ছবিঃ তোফাজ্জল হোসেন |
ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন ছবিঃ তোফাজ্জল হোসেন |
ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন ছবিঃ তোফাজ্জল হোসেন |
Comments
Post a Comment